ব্রুনাই ভিসার দাম কত? একটি বিস্তারিত গাইড (২০২৫)
আপনি কী ব্রুনাই দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাহলেএই ব্লগটি আপনার জন্য । কিন্তু
ভিসা ছাড়া তো সেই স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়। ব্রুনাই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটা
ছোট্ট কিন্তু ঝকঝকে দেশ। যার পুরো নাম ব্রুনাই দারুসসালাম। বোর্নিও দ্বীপে
অবস্থিত এই দেশটা যেন একটা লুকানো রত্ন।যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর আধুনিক
জীবনযাত্রার মিশেল ঘটেছে।
তাই প্রথমেই জানতে হবে ব্রুনাই ভিসার দাম কত এবং এর জন্য কী কী লাগবে। ভিসার দাম
নির্ভর করে ভিসার ধরন।আবেদনের মাধ্যম (সরকারি বা বেসরকারি) এবং এজেন্সির উপর।
সঠিক পরিকল্পনা আর কাগজপত্র থাকলে ব্রুনাইয়ের পথ সহজ হবে। তাই ব্রুনাই দেশের সকল
বিষয় জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন।
পেজ সুচিপত্রঃ ব্রুনাই ভিসার দাম কত? একটি বিস্তারিত গাইড (২০২৫)
ব্রুনাই ভিসার বিভিন্ন ক্যাটাগরি
ব্রুনাই ভিসার দাম কত তা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে। প্রতিটি
ভিসার দাম এবং শর্ত আলাদা।ব্রুনাই ছোট্ট এই দেশটার নাম শুনলেই মনে হয় একটা
স্বপ্নের জায়গা। বাংলাদেশিই অনেক ব্রুনাই যাওয়ার কথা ভাবেন কেননা সবুজ
প্রকৃতি ঝকঝকে মসজিদ আর উন্নত জীবনযাত্রার আকর্ষণে বাংলাদেশিই সেখানে জেতে চাই।
কিন্তু যাওয়ার আগে দরকার সঠিক ভিসা আর সেজন্য জানতে হবে ব্রুনাইয়ের ভিসার
ধরনগুলো। ব্রুনাইয়ে বিভিন্ন কাজে যাওয়ার জন্য পাঁচটা প্রধান ভিসা আছে ওয়ার্ক
পারমিট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা স্টুডেন্ট ভিসা ব্যবসায়িক ভিসা আর মেডিকেল ভিসা।
প্রথমেই বলি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কথা। এটা বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে চেনা আর
জনপ্রিয়।
কারণ ব্রুনাইয়ে নির্মাণ তেল-গ্যাস, বা আইটি সেক্টরে কাজের সুযোগ
প্রচুর।আর বেতনও বেশ ভালো। মাসে ৬০,০০০ থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়! এই
ভিসার মেয়াদ সাধারণত ২-৫ বছর আর রিনিউ করা যায়। তবে এর জন্য চাকরির অফার
লেটার আর মেডিকেল রিপোর্ট জরুরি। খরচ সরকারি পথে 2.৫-৪ লাখ আর এজেন্সি দিয়ে
গেলে ৫-৭ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। তাই সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
এবার আসি টুরিস্ট ভিসায়। ব্রুনাইয়ের ওমর আলি সাইফুদ্দিন মসজিদ বা কাম্পং
আয়ের জলের গ্রাম দেখতে চাও? তাহলে এই ভিসা তোমার জন্য। এটা ৩০-৯০ দিনের জন্য
আর খরচ পড়ে ৮০,০০০ থেকে ২.৫ লাখ টাকা। শুধু একটা বৈধ পাসপোর্ট আর ব্যাংক
স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে। এই ভিসায় কাজ করা যায় না তবে ব্রুনাইয়ের সৌন্দর্য
উপভোগ করার জন্য দারুণ।
যারা পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা। ব্রুনাইয়ের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চাইলে এটা লাগবে। খরচ ১-২.৫ লাখ টাকা। তবে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার আর আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ দেখাতে হয়। এই
ভিসায় পড়ার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে পার্ট-টাইম কাজের সুযোগও মিলতে পারে।
ব্রুনাইয়ে পড়াশোনার পরিবেশ শান্ত আর উন্নত তাই স্টুডেন্টদের জন্য বেশ ভালো
জায়গা।এবার ব্যবসায়িক ভিসা। একজন ব্যবসায়ী ব্রুনাইয়ে কোনো মিটিং বা
বাণিজ্যিক কাজে যেতে চাইলে ভিসা দরকার। এটাও ৩০-৯০ দিনের জন্য আর খরচ ১-২ লাখ
টাকা। ব্যবসার আমন্ত্রণপত্র আর পাসপোর্ট থাকলেই হবে। ব্রুনাইয়ের অর্থনীতি
তেল-গ্যাস নির্ভর হলেও ব্যবসার সম্ভাবনা প্রচুর তাই এই ভিসা বেশ কাজে আসে।শেষে
মেডিকেল ভিসা।
ব্রুনাইয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে এটা লাগবে। খরচ ৮০,০০০ থেকে ১.২ লাখ
টাকা। হাসপাতালের চিঠি আর ডাক্তারের রেফারেল দেখাতে হয়। ব্রুনাইয়ের
হাসপাতালগুলো আধুনিক তাই চিকিৎসার জন্য এটা ভালো অপশন। তবে কাগজপত্র ঠিকঠাক
রাখা জরুরি, নয়তো ঝামেলা হতে পারে।প্রতিটি ভিসার দাম আর শর্ত আলাদা। ওয়ার্ক
পারমিটে খরচ বেশি কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা। টুরিস্ট বা মেডিকেল ভিসা তুলনায়
সস্তা তবে স্বল্পমেয়াদি। তাই সঠিক তথ্য আর কাগজপত্র থাকলে ব্রুনাইয়ের পথটা
অনেক সহজ।
আরও পড়ুনঃ
ডিভি লটারি ২০২৫ যোগ্য দেশ
ব্রুনাই ভিসার দাম নির্ধারণের বিষয়গুলো
ব্রুনাই ভিসার দাম কত নির্ধারণের বিষয়গুলো অনেকটা নির্ভর করে কয়েকটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর। যেগুলো জানা থাকলে আপনি সঠিক পরিকল্পনা করে এগোতে
পারবেন। প্রথমত ভিসার ধরন বা ক্যাটাগরি এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।
ব্রুনাই সরকার বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিসা দিয়ে থাকে। প্রতিটি ভিসার দাম আলাদা
কারণ এদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণের সময় এবং শর্তাবলী ভিন্ন।
উদাহরণস্বরূপ, টুরিস্ট ভিসার দাম সাধারণত ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকার মধ্যে
থাকে। যেখানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ৩,০০,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত
হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করেন। স্টুডেন্ট
ভিসার ক্ষেত্রে খরচ ১,০০,০০০ থেকে ৩,৫০,০০০ টাকার মধ্যে হয়।
যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার এবং কোর্সের ধরনের ওপর নির্ভর
করে।আবেদনের মাধ্যমও দামের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। আপনি যদি সরাসরি ব্রুনাই
দূতাবাসে গিয়ে নিজে নিজে আবেদন করেনতাহলে খরচ অনেক কম হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু
ভিসা আবেদন ফি যা সাধারণত ১,৪০০ থেকে ২,০০০ টাকা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সংগ্রহের খরচ বহন করতে হবে।কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই সময় বাঁচাতে বা ঝামেলা
এড়াতে এজেন্সি বা দালালের শরণাপন্ন হন। এজেন্সিগুলো সেবার জন্য অতিরিক্ত ফি
নেয় যার ফলে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তৃতীয় বিষয় হলো ভিসার মেয়াদ এবং
নাগরিকত্ব। ভিসার মেয়াদ যত বেশি খরচও তত বাড়ে। এক বছরের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার
দাম পাঁচ বছরের ভিসার তুলনায় কম হবে।
এছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ফি এক রকম হলেও অন্য দেশের নাগরিকদের
ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন হতে পারে। চতুর্থত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের খরচও
বিবেচনায় নিতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য কোম্পানির অফার লেটার,
পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এবং অভিজ্ঞতার সনদ লাগে। এসব
কাগজপত্র তৈরি করতে কিছু অতিরিক্ত খরচ হয়। যা ভিসার মোট খরচের সঙ্গে যোগ
হয়।ব্রুনাই যাওয়ার উদ্দেশ্য এবং কাজের ধরনও দাম নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। কারণ
এই সেক্টরে বেতন এবং চাহিদা বেশি। অন্যদিকে নির্মাণ বা কৃষি কাজের ভিসার দাম
তুলনামূলক কম। এজেন্সি ছাড়াও বিমান টিকিট, মেডিকেল টেস্ট, এবং প্রাথমিক
ব্যয়ের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত ব্রুনাই যাওয়ার মোট খরচ ২,০০,০০০
থেকে ৭,০০,০০০ টাকার মধ্যে হয়। যা ভিসার ধরন এবং আবেদনের মাধ্যমের ওপর নির্ভর
করে।
ব্রুনাই ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনাকে ব্রুনাই ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে ব্রুনাই ভিসার দাম কত
জানতে হবে । প্রথমেই জানতে হবে ভিসার জন্য কী কী কাগজপত্র লাগবে। কাগজপত্র
ঠিকঠাক না থাকলে ভিসা প্রক্রিয়া আটকে যেতে পারে। তাই এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা
থাকা জরুরি।ব্রুনাইয়ের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ভর করে ভিসার
ধরনের ওপর। তবে কিছু সাধারণ ডকুমেন্ট সব ভিসার ক্ষেত্রেই লাগে। প্রথমেই দরকার
একটা বৈধ পাসপোর্ট, যার মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে। পাসপোর্টটা যেন ঝকঝকে
আর আপডেটেড হয়।কারণ এটাই তোমার প্রথম পরিচয়। এরপর লাগবে পাসপোর্ট সাইজের ছবি
সাধারণত ৪-৬টি যেগুলো সাম্প্রতিক তোলা এবং সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের হতে হবে।
এখন আপনি যদি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাহলে ব্রুনাইয়ের কোনো
কোম্পানি থেকে চাকরির অফার লেটার জরুরি। এটা ছাড়া ভিসা মিলবে না কারণ এটাই
প্রমাণ করে তুমি সেখানে কাজ করতে যাচ্ছ। এছাড়া মেডিকেল রিপোর্ট লাগবে যেটা
ব্রুনাই সরকারের নির্দিষ্ট হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে করাতে হয়।এটা নিশ্চিত করে
যে তুমি শারীরিকভাবে কাজের জন্য ফিট। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হলো পুলিশ
ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।এটা স্থানীয় থানা বা পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে
সংগ্রহ করতে হবে। যদি স্টুডেন্ট ভিসার কথা বলি। তাহলে ব্রুনাইয়ের কোনো
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার আর আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ দেখাতে হবে।
এটা নিশ্চিত করে যে তুমি পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবে। টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে
ব্যাংক স্টেটমেন্ট আর ভ্রমণ পরিকল্পনা দেখাতে হতে পারে। যাতে বোঝা যায় তুমি
শুধু ঘুরতে যাচ্ছ। ব্যবসায়িক ভিসার জন্য লাগবে ব্রুনাইয়ের কোনো কোম্পানির
আমন্ত্রণপত্র, আর মেডিকেল ভিসার জন্য হাসপাতালের চিঠি বা ডাক্তারের রেফারেল।
কিছু ক্ষেত্রে, যেমন আইটি বা স্বাস্থ্যসেবা সেক্টরে কাজের জন্য, শিক্ষাগত সনদ
বা অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেটও জমা দিতে হয়। এই কাগজগুলো তৈরি করতে একটু সময় আর
ধৈর্য লাগে। তবে সব ঠিকঠাক থাকলে ভিসা পাওয়া অনেক সহজ। আমার পরামর্শ কাগজপত্র
জমা দেওয়ার আগে দুবার চেক করে নিবেন। কোনো ভুল থাকলে ঝামেলা হতে পারে। আর
হ্যাঁ এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে তারা অনেক কাগজের ব্যবস্থা করে দেয়। তবে
খরচ বেশি হয়। তাই নিজে নিজে করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
ভিসা প্রক্রিয়া: কীভাবে আবেদন করবে?
ব্রুনাই যাওয়ার স্বপ্নটা যখন মাথায় ঘুরছে তখন ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে একটু
টেনশন তো হবেই তাই না? কিন্তু চিন্তা নেই আমি আপনাকে এমনভাবে বুঝিয়ে দেব।
ব্রুনাই ভিসার জন্য আবেদন পক্রিয়াই ব্রুনাই ভিসার দাম কত । আসলে খুব জটিল না
যদি তুমি ধাপগুলো ঠিকঠাক মেনে চলো। প্রথম ধাপ হলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
করা। এর মধ্যে থাকবে বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ) পাসপোর্ট সাইজের
ছবি। চাকরির অফার লেটার (ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য) মেডিকেল রিপোর্ট পুলিশ
ক্লিয়ারেন্স আর ভিসার ধরন অনুযায়ী অন্যান্য কাগজ। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার
লেটার বা হাসপাতালের চিঠি। এই কাগজগুলো ঠিকঠাক তৈরি করা হলে আধা কাজ শেষ! এরপর
ধাপ হলো ব্রুনাই দূতাবাসে যোগাযোগ করা।
বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের দূতাবাসে গিয়ে ভিসা আবেদন ফর্ম নিতে হবে। ফর্মটা
সাবধানে পূরণ করো। কোনো ভুল থাকলে ঝামেলা হতে পারে। তবে, ভালো খবর হলো।অনেক
সময় অনলাইনেও আবেদন করা যায়। ব্রুনাইয়ের অফিসিয়াল ভিসা পোর্টালে গিয়ে ফর্ম
পূরণ করে কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। যদি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করেন তাহলে তারা
এই কাজটা করে দেবে, তবে তাদের ফি একটু বেশি। পরের ধাপ হলো ভিসা ফি জমা দেওয়া।
ফি ব্যাংক ড্রাফট বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।
ফি নির্ভর করবে ভিসার ধরনের ওপর—টুরিস্ট ভিসায় কম, ওয়ার্ক পারমিটে
বেশি। এরপর আসে প্রক্রিয়াকরণের অপেক্ষা। ভিসা প্রক্রিয়া করতে সাধারণত ১৫ থেকে
৩০ দিন লাগে।তবে কখনো কখনো ৪-৬ সপ্তাহও লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরো আর মাঝে মাঝে
দূতাবাসে খোঁজ নাও। শেষ ধাপ হলো ভিসা অনুমোদন। ভিসা মঞ্জুর হলে দূতাবাস থেকে
পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। এখানে একটা টিপস—সরকারি পথে আবেদন করলে খরচ কম হবে।
আর প্রতারণার ঝুঁকিও কম। এজেন্সি বেছে নিলে তাদের লাইসেন্স আর রিভিউ চেক করে
নিবেন। আর হ্যাঁ কাগজপত্র জমা দেওয়ার আগে দুবার চেক করে নিবেন ছোট ভুলেও বড়
ঝামেলা হতে পারে। এই প্রক্রিয়া মেনে চললে ব্রুনাইয়ের পথটা অনেক সহজ হয়ে
যাবে।
ব্রুনাই ভিসার দাম বেশি হওয়ার কারণ
ব্রুনাই ভিসার দাম শুনলে অনেকেরই মাথা ঘুরে যায় তাই না? কেন এত বেশি খরচ এটা
নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। চলেন ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলি। ব্রুনাই ভিসার
দাম বেশি হওয়ার পেছনে কয়েকটা বড় কারণ আছে আর এগুলো জানলে আপনি বুঝতে পারবে
কেন এত টাকা লাগে। প্রথম কারণ হলো এজেন্সির ফি। বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ মানুষই
ভিসার জন্য এজেন্সির ওপর ভরসা করে। কারণ প্রক্রিয়াটা একটু জটিল মনে হয়।
কিন্তু এই এজেন্সিগুলো তাদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়।
সরকারি পথে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ২.৫-৪ লাখ টাকা হতে পারে। কিন্তু এজেন্সির
মাধ্যমে গেলে এটা ৫-৭ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।
কিছু অসাধু এজেন্সি তো আরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়, তাই সতর্ক থাকা
জরুরি। দ্বিতীয় কারণ হলো কাগজপত্র তৈরির খরচ। ভিসার জন্য পাসপোর্ট, মেডিকেল
টেস্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, চাকরির অফার লেটার—এসব তৈরি করতে ২০,০০০ থেকে
৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। বিশেষ করে মেডিকেল টেস্ট ব্রুনাই সরকারের
নির্দিষ্ট হাসপাতাল থেকে করাতে হয়। যেটা বেশ খরচসাপেক্ষ।তৃতীয় কারণ হলো উচ্চ
বেতনের সম্ভাবনা। ব্রুনাইয়ে কাজের বেতন বেশ ভালো—নির্মাণ শ্রমিকরা মাসে
৬০,০০০-৭০,০০০ টাকা, আর আইটি বা তেল-গ্যাস সেক্টরে লাখ টাকার ওপরে আয় করতে
পারে। এই লোভনীয় বেতনের কারণে এজেন্সিগুলো ভিসার দাম বাড়িয়ে দেয়।
জেনে যে লোকে টাকা খরচ করতে রাজি। চতুর্থ কারণ হলো ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি।
ব্রুনাই সরকারের নির্ধারিত ফি দূতাবাসের খরচ আর কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্যও
একটা মোটা অঙ্ক দিতে হয়। এছাড়া, কাজের ধরনও দামের ওপর প্রভাব ফেলে। তেল-গ্যাস
বা আইটি সেক্টরের ভিসা বেশি দামি, কারণ এগুলো উচ্চ দক্ষতার কাজ। অন্যদিকে,
নির্মাণ বা সাধারণ কাজের ভিসা তুলনামূলক সস্তা। আরেকটা বিষয় হলো বিমান ভাড়া
আর প্রাথমিক খরচ। ব্রুনাই যাওয়ার টিকিট আর প্রথম কয়েক মাসের খরচ মেটাতে
বাড়তি টাকা লাগে। যেটা অনেকে ভিসার খরচের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। এই সব মিলিয়ে
ভিসার দাম অনেক সময় আকাশছোঁয়া মনে হয়। আমার পরামর্শ, সরকারি পথে বা বিশ্বস্ত
এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করো। আর প্রতারণা এড়াতে সব তথ্য ভালো করে যাচাই করো।
ব্রুনাইয়ের স্বপ্নটা সত্যি হওয়ার পথে এই খরচগুলো একটা বিনিয়োগ।তাই সঠিক
পদক্ষেপ নিলে সফলতা নিশ্চিত।
ব্রুনাই যাওয়ার খরচ কাজের সুযোগ ও বেতন
ব্রুনাই যেতে সবচেয়ে বড় খরচ হলো ভিসা প্রসেসিং। ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য
সরকারিভাবে ২,৫০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ টাকা এবং বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে
৩,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা লাগতে পারে। ভিসা ছাড়াও বিমান টিকিট
(৫০,০০০-৮০,০০০ টাকা) মেডিকেল পরীক্ষা (৫,০০০-১০,০০০ টাকা) এবং প্রয়োজনীয়
কাগজপত্র (পাসপোর্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ব্যাংক স্টেটমেন্ট,
ছবি) তৈরির খরচ যোগ হবে। এছাড়া ব্রুনাই পৌঁছে থাকার জায়গা ও প্রাথমিক খরচের
জন্য ৫০,০০০-১,০০,০০০ টাকা হাতে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। মোট খরচ ৯,০০,০০০ থেকে
১২,০০,০০০ টাকা হতে পারে।তবে সরকারি চ্যানেল ব্যবহার করলে খরচ কিছুটা কম
হয়।ব্রুনাইয়ে কাজের সুযোগ মূলত তেল ও গ্যাস শিল্প, নির্মাণ হোটেল রেস্তোরাঁ
এবং স্বাস্থ্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বেশি।
দক্ষতাভিত্তিক কাজ যেমন কনস্ট্রাকশন শ্রমিক ড্রাইভার প্লাম্বার ইলেকট্রিশিয়ান
মেকানিক এবং হোটেল কর্মীর চাহিদা রয়েছে। পেশাভিত্তিক কাজের মধ্যে পেট্রোলিয়াম
ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার নার্স এবং শিক্ষকের চাহিদা উল্লেখযোগ্য। বেতন কাজের ধরন ও
দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ শ্রমিকদের জন্য মাসিক বেতন ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০
টাকা যেখানে দক্ষ শ্রমিক বা ওভারটাইম করলে ১,৪৫,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত
আয় সম্ভব। পেশাজীবীদের জন্য বেতন ১,০০,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে
পারে।ব্রুনাই যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণার ঝুঁকি অনেক। অনেক দালাল বা এজেন্সি
অতিরিক্ত বেতনের লোভ দেখিয়ে বেশি টাকা নিয়ে ভুয়া ভিসা বা জব লেটার দেয়।
এজন্য সবসময় সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন বোয়েসেল বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের
মাধ্যমে ভিসা প্রসেস করার চেষ্টা করুন।
কোনো এজেন্সির সঙ্গে কাজ করলে তাদের লাইসেন্স যাচাই করুন এবং চুক্তিপত্র
ভালোভাবে পড়ুন। জব অফার লেটার এবং কোম্পানির সত্যতা যাচাই করতে ব্রুনাইয়ের
দূতাবাস বা প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনো অগ্রিম টাকা দেওয়ার আগে
সবকিছু নিশ্চিত করুন, কারণ প্রতারিত হলে টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন।ব্রুনাইয়ে
কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো উচ্চ বেতন এবং উন্নত সামাজিক নিরাপত্তা। দেশটি
ইসলামিক হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য সাংস্কৃতিকভাবে মানিয়ে নেওয়া সহজ।
বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষা এবং আধুনিক জীবনযাত্রা ব্রুনাইকে আকর্ষণীয়
করে। শ্রমিকদের জন্য ৮ ঘণ্টা কাজের সময় এবং ওভারটাইমের সুযোগ রয়েছে। তেল ও
গ্যাস শিল্পে কাজের স্থিতিশীলতাও একটি বড় সুবিধা।
ব্রুনাইয়ের অর্�Cleanerthনীতি ছোট হওয়ায় কাজের সুযোগ সীমিত। মালয় ভাষা শেখা
বাংলাদেশিদের জন্য কঠিন হতে পারে যা কর্মক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। জীবনযাত্রার
খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি বিশেষ করে থাকা-খাওয়ার খরচ। কিছু প্রবাসী
বৈষম্যের সম্মুখীন হন। যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া দেশটির কঠোর আইন
ও রক্ষণশীল সংস্কৃতি মানিয়ে নেওয়া সবার জন্য সহজ নয়।ব্রুনাইয়ে একেবারে
বিনামূল্যে ভিসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ‘ফ্রি ভিসা’ বলতে সাধারণত এমন ভিসা
বোঝায় যেখানে কোম্পানির চুক্তির বাইরে কাজ করা যায়। কিন্তু এর জন্যও প্রসেসিং
ফি মেডিকেল টেস্ট আর কাগজপত্র তৈরির খরচ দিতে হয়।
অনেক এজেন্সি ফ্রি ভিসার লোভ দেখিয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু শেষে
ভুয়া কাগজ দেয়। তাই এই ফাঁদে পড়ার আগে সরকারি চ্যানেল বা বিশ্বস্ত এজেন্সির
মাধ্যমে যাচাই করো। সত্যি বলতে ব্রুনাইয়ের স্বপ্ন পূরণে একটু খরচ তো করতেই
হবে। তবে সঠিক পথে গেলে সাফল্য নিশ্চিত!ব্রুনাই যাওয়া অনেকের জন্য স্বপ্ন
পূরণের পথ হতে পারে। তবে সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া এটি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।
দক্ষতা অর্জন ও সরকারি চ্যানেল ব্যবহার করুন এবং প্রতারণা থেকে সাবধান থাকুন।
ব্রুনাইয়ের উচ্চ বেতন ও নিরাপদ পরিবেশ আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। তবে ভাষা
খরচ এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকুন। সঠিক
পদক্ষেপ নিলে ব্রুনাই আপনার জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলতে চাই ব্রুনাই ভিসার দাম কত এইটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসা
নিচ্ছেন তার উপর। ব্রুনাই যাওয়া অনেকের জন্য জীবন বদলে দেওয়ার সুযোগ। কিন্তু
এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে সঠিক তথ্য এবং পরিকল্পনা জরুরি। সাধারণত কাজের ভিসার
জন্য ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা লাগতে পারে। যদি সরকারি মাধ্যমে খরচ একটু কম হতে
পারে। প্রায় ২.৫ থেকে ৪ লাখ টাকা। কিন্তু এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে গেলে খরচ
বেশি। এমনকি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকাও হতে পারে। টুরিস্ট বা ভিজিট ভিসার দাম
তুলনামূলক কম ১ থেকে ২.৫ লাখ টাকার মধ্যে। স্টুডেন্ট ভিসার জন্যও ১ থেকে ২.৫
লাখ টাকা লাগে। তবে সরকারি স্কলারশিপ পেলে খরচ আরও কম হয়।
মনে রাখবেন ভিসার দাম ছাড়াও বিমান ভাড়া কাগজপত্র তৈরি মেডিকেল টেস্ট আর
অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট বাজেট বাড়তে পারে। তাই আগে থেকে ভালো করে খোঁজ নিয়ে
বিশ্বস্ত এজেন্সি বা সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করা উচিত। দালালের ফাঁদে
পড়ে অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সবকিছু যাচাই করে নিন। ব্রুনাইয়ের
উন্নত জীবনযাত্রা আর ভালো বেতনের সুযোগ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তবে সঠিক
পরিকল্পনা আর সঠিক তথ্য জানা খুব জরুরি।প্রতারণা থেকে বাঁচতে সবসময় তথ্য যাচাই
করো। আশা করি এই লেখাটি আপ্নারদের ব্রুনাই যাওয়ার পথকে একটু সহজ করবে। যদি
কোনো প্রশ্ন থাকে আমাকে জানাবেন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য
ধন্যবাদ!
সাফল্য 24 নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন-প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url